গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: গলাচিপা পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া গলাচিপা-উলানিয়া খালটি এখন গলার কাটা হয়ে বিধছে। সংস্কার ও যথাযথ তদারকির অভাবে একদিকে ময়লা আবর্জনা জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অপরদিকে বিভিন্ন প্রজাতির মশাসহ রোগব্যধির প্রজননের অন্যতম স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এদিকে সারাদেশে ডেঙ্গর প্রকোপ বাড়ায় এডিস মশাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মশক নিধনের জোর প্রচেষ্টা চালালেও সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষের নজর নেই খালটির দিকে। ফলে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালটির দুই পাড়ে বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার বসতীদের প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ময়লা আবর্জনা জমে কচুরিপানা ও আগাছা, জলাবদ্ধতা, শুকনো মৌসুমে দূর্গন্ধ ছড়ায় আর মশা মাছির জন্ম ওই খালে। এ খালটি এখন গলার কাটা হয়ে বিধছে গলাচিপাবাসীর। এদিকে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মশক নিধন করবেন বলে জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
গলাচিপা পৌর অফিস সূত্রে জানগেছে, গলাচিপার ওই খালকেকেন্দ্র করেই গলাচিপা শহর গড়ে ওঠে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে পৌর এলাকার মধ্যে রয়েছে আড়াই কিলোমিটার খাল। গলাচিপা খালের পশ্চিম দিকে রামনাবাদ নদী এবং পূর্ব দিকে তেঁতুলিয়া নদী। মাঝখানে গলাচিপা পৌর শহর। পৌর এলাকার সাতটি ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে অর্থাৎ ১,২,৩ এবং ৪,৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড ঘেঁষে এ খালটি প্রবাহিত হচ্ছে।
১৯৯৭ সালে গলাচিপা পৌরসভা হওয়ার পর খালের স্থানীয় কাজী মসজিদ এলাকায় একটি অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে তুলনামূলক ছোট একটি পাইপ বসানো হয়। যা এখন ভেঙ্গে বেইলি ব্রিজ করা হচ্ছে। কিন্তু ব্রিজ করার জন্য কাজী মসজিদ এলাকায় একটি কৃত্রিম বাঁধা দেওয়া হয়েছে। এর আগে যাওবা একটু জোয়ার ভাটার পানি চলাচল করতে তা এখন বন্ধ রয়েছে। এতে জোয়ার ভাটা এখন বন্ধ প্রায়। এতে ভোগান্তি আরো বেড়েছে। অপর দিকে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বর্জ্য খালটির বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রাখার ফলে দূর্গন্ধ ও মশা মাছিসহ বিভিন্ন রোগজীবাণুর প্রজননের সহায়ক হচ্ছে। খালে পানি চলাচল না করায় কচুরিপানা ও বিভিন্ন আগাছায় ভরে গেছে খালটিতে। খাল পাড়ে গেলেই যে কারও নজরে পড়বে বিভিন্ন পোকামাকড়সহ বিষাক্ত সাপ।
এদিকে খালটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে গলাচিপা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ প্রায় এক বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে একটি সভা করে। খাল রক্ষা এবং এর পানি চলাচল করে খালের প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহল ওই সভায় নানান জটিলতা তৈরি করে। এ উদ্যোগের সাথে সহমত পোষণ করে খালের বাস্তবতা পরিদর্শন করেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে থমকে আছে খাল খননের কাজ। তবে শহরবাসীর প্রাণের দাবি খালটি সচল করা হোক।
এব্যাপারে গলাচিপা বন্দরের খাল পাড়ের বাসিন্দা শ্যাম সুন্দর পাল বলেন, ‘খালটি খনন যেদিনই হোক এ নিয়ে আপাতত আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। এখন এডিস মশার যে উপদ্রপ শুরু হয়েছে। তাতে আমরা আতঙ্কে থাকি। এখন পর্যন্ত পৌরসভা থেকে খালটিতে কোন ধরণের মশক নিধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হয়নি পরিষ্কার করারও উদ্যোগ। আমরা প্রতিদিন বাসায় মশার ওষুধ বা স্প্রে করেও মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছি না।’
গলাচিপা পৌর মেয়র আহসানুল হক তুহিন বলেন, ‘খালটিতে মশক নিধনে আমরা কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবো। এছাড়াও খালটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে দাতা সংস্থার কাছে একাধিক প্রজেক্ট প্রোফাইল (পিপি) পাঠানো হয়েছে।’
গলাচিপা খালটি ময়লা আবর্জনা জমে থাকা প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন,‘যদিও আমরা সরাসরি পৌর এলাকায় কাজ করতে পারি না। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষকে আমরা অবহিত করেছি। তারা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো।’